শনিবার , ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ২০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অস্ট্রেলিয়া
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আফ্রিকা
  6. আবহাওয়া
  7. আমেরিকা
  8. আয়ারল্যান্ড
  9. ইউক্রেন
  10. ইউরোপ
  11. ইতালি
  12. কানাডা
  13. খেলাধুলা
  14. গ্রাম বাংলা
  15. চিত্র বিচিত্র

৩১ বছর ধরে বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন রশিদ মাস্টার

প্রতিবেদক
Probashbd News
অক্টোবর ২৯, ২০২২ ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

Spread the love

শিক্ষক মো. আবদুর রশিদ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় এইচএসসি পাস করেই থেমেছেন শিক্ষা জীবনে। তবে মাথায় ঢোকে ঝরে পড়া ও অসহায় শিশু-বৃদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর। দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বেশিদিন থাকতে পারেননি। অবশেষে নিজের বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে শুরু করেন পাঠদান। পরবর্তীতে দুটি টিনের ঘর তৈরি করেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে রশিদ মাস্টারের পাঠশালা।

আবদুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর দাড়িপাড়ার ইদ্রিশ আলীর ছেলে। ৩১ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। তার পাঠশালায় এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার শিশু-বৃদ্ধ জ্ঞান অর্জন করেছেন। তারা এখন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাহাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে আবদুর রশিদ ভর্তি হন মনাকষা হুমায়ন রেজা স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বাবা এবং ভাই অসুস্থ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। চার বছর বিরতি দিয়ে ভর্তি হন আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে। ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাসের শেষ করতে হয় শিক্ষা জীবন।

নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করে চাঁনতারা প্রাইমারি স্কুল। সেখানে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতার পর ষড়যন্ত্র করে বাদ দেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে মনোহরপুর এলাকায় চলে যান কৃষি কাজের সন্ধানে। পরে কৃষি কাজে মন না বসলে কিছুদিন পরে পাঁচজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে আবারও প্রতিষ্ঠিত করেন মনোহরপুর প্রাইমারি স্কুল। সেখানে স্কুলটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে এবং শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করেন। আবারো একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে তাকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করেন।

এরপর ভেঙে পড়েন আাবদুর রশিদ। ছেলে শিক্ষকতা করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েন তার মা উমেতুন্নেছা। ১৯৯১ সালে মাকে সান্ত্বনা দিতে নিজ বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে শুরু করেন শিক্ষকতা। খোলা আকাশের নিচে পাটি বিছিয়ে শুরু করেন শিক্ষকতা। প্রথমে ঝরে পড়া শিশুদের পড়ানো হত। এরপর প্রাইভেটের মতো করে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। বয়স্করাও তার কাছ থেকে শিক্ষা নেন। বর্তমানে তাঁর পাঠশালায় দেড়শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। রশিদের ছেলে হোসেন আলী সম্রাট ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শ্রী সবিন্দ্র নাথ দাসও মাঝে মধ্যে পাঠদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ওষুধের দোকানও করেন রশিদ।

আবদুর রশিদ মাস্টার জানান, প্রথমে বাড়ির পেছনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বাড়ির বাইরে টিন দিয়ে দুটি ঘর করে পড়ানো হচ্ছে। কখনো কারও থেকে টাকা নেইনি। দোকানে ওষুধ বিক্রির আয়ে সংসার চলে। আমার আট ছেলে বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছে। আমি পড়িয়েই আনন্দ পাই।

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সবিন্দ্র নাথ দাস বলেন, আদুর রশিদ মাস্টার বিনা পারিশ্রমিকে ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। সমাজে এটি বিরল। শরীর সুস্থ থাকলে তাকে সাহায্য করতে স্কুলে গিয়ে শিশুদের পড়াই। এতে আমারও ভালো লাগে।’

স্থানীয় মামনি কেজি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সাথী খাতুন জানায়, ‘ছোট থেকেই রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় পড়ছি। আমরা একসঙ্গে ২০-২৫ জন পড়তে আসি। এখানে বাংলা, ইংরেজি ও অংক পড়ানো হয়।’

তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিসা খাতুন জানায়, ‘স্কুলের শিক্ষকরা বাড়ির জন্য যে পড়া দেন, প্রতিদিন রশিদ স্যারের পাঠশালায় গিয়ে পড়ে আসি। সেখানে কোনো টাকা পয়সা লাগে না। পড়তেও ভালো লাগে।’

স্থানীয় বাসিন্দা নারগিস খাতুন বলেন, ‘আমার ছয় বছর বয়সী ছেলে আবদুর রহিমকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠশালায় দিয়েছি। বড় ছেলে আবদুর রহমানকে ওই পাঠশালায় পড়িয়ে স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছি। বাবা-মায়ের মতো যত্ন করে এখানে পড়ানো হয়।

স্থানীয় একটি কেজি স্কুলের শিক্ষক মো. মোস্তাকিম বলেন, ‘আশপাশের প্রাইমারি ও কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীরা রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে প্রাইভেটের মতো পড়তে পারে। ফলে দ্রুতই ওই এলাকায় বাড়ছে শিক্ষিতের হার।’

সাহাপাড়া বাজারের ফলের দোকানদার সৈয়ব আলী বলেন, ‘আমার পরিবারে কেউ শিক্ষিত ছিল না। কেউ আমাকে পড়াশোনার জন্য বলেনি। নিজে স্বাক্ষরও করতে পারতাম না। দোকান দেওয়ার পর হিসাবের জন্য লোক রাখতে হতো। পরে রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে রাতে পড়েছি। বেতন দিয়ে এখন আর লোক রাখতে হয় না।’

আবদুল খালেক নামে আরেক মুদি দোকানি বলেন, ‘পড়াশোনা না জানায় দোকান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। কাস্টমাররা বাকি নিয়ে টাকা দিত না। নিজে লিখেও রাখতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় যাই। সেখানে বছরখানেক পড়ার পর এখন নিজেই সব হিসাব লিখতে পারি।’

শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, রশিদ একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার গরীব অসহায় শিশু, কিশোর এবং বয়স্করা তার স্কুলের ছাত্র। তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

সর্বশেষ - প্রবাস

Translate »