স্পেনের অভিবাসন আইনে সম্প্রতি সংস্কার করায় প্রবাসী নাগরিকদের কর্মসংস্থান ও বসবাসের প্রক্রিয়া সহজ করতে দেশটি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে জনবল নিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ ও স্পেনের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি অফ স্টেট ইসাবেল কাস্ত্রো ফার্নান্দেজ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ বৈঠক তার দপ্তরে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রায় ১০ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। দ্বিপাক্ষিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার আওতায় বাংলাদেশ থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। স্পেন বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। এ বছর দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তৈরি পোশাক ও সবজি উৎপাদন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহের দিক থেকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয় এবং মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয়। ইইউ ডাইরেক্টিভ নং ২০১৪/৩৬ এর আওতায় গ্রীসের কৃষিখাতে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি কর্মী নিয়োগের জন্য সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্পেনের সঙ্গে অনুরূপ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। মেরিটাইম সেক্টরে প্রশিক্ষণ সহায়তা বিষয়ে অপর একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া বর্তমানে উভয়পক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে। শিপিং/মেরিটাইম ও আইসিটি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগের মাধ্যমে স্পেন উপকৃত হতে পারে।’
এ সময় রাষ্ট্রদূত স্পেনে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড প্রবাসীদের বৈধকরণের জন্য অভিবাসন সেক্রেটারিকে অনুরোধ করেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে স্পেন সরকারের সহযোগিতা ও সমর্থন জোরদারের জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
সেক্রেটারি ইসাবেল অবহিত করেন, ‘স্পেনের যেসব খাতে জনবল সংকট রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগের সুযোগ রেখে অভিবাসন আইনে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং বিস্তারিত বিধিমালা প্রণয়নের কাজটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনে প্রবাসী কর্মীদের ৪ বছর মেয়াদে ভিসা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। তারা বছরে ৯ মাস কাজ করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এই আইনের অধীনে স্পেনে দক্ষ জনবল নিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। যেসব বাংলাদেশী বর্তমানে স্পেনে আনডকুমেন্টেড অবস্থায় আছেন, তারা স্পেনে ৩ বছর বসবাস করলে অভিবাসন আইনের অধীনে বৈধ হতে পারবেন। এছাড়া স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষতা অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকলে তারা খুব সহজেই বৈধ হতে পারবেন। এর বাইরেও বর্তমানে কাজে নিযুক্ত শ্রমিকগণ স্প্যানিশ আইনের শর্তপূরণ সাপেক্ষে বৈধ হতে পারবেন এবং পরিবারের সদস্যদের স্পেনে আনতে পারবেন।’
রাষ্ট্রদূত এবং অভিবাসন সেক্রেটারি স্প্যানিশ আইনের আওতায় অধিক হারে বাংলাদেশী জনবল নিয়োগে ভবিষ্যতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।