র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বুধবার টেলিফোন করলে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ব্লিংকেন যেভাবে তার বক্তব্যে সাড়া দিয়েছেন, সেটা ইতিবাচক। আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। র্যাবের বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে এমন পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপরই ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্তকে ‘অপরিপক্ব’ অভিহিত করে সমালোচনা করেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ব্লিংকেন বুধবার মোমেনকে টেলিফোন করেন। প্রথমে ব্লিংকেন টেলিফোন করার সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সফর উপলক্ষ্যে মোমেন একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ছিলেন। সে কারণে টেলিফোন ধরতে পারেননি। পরে ফিরতি কল করলে অন্য দেশের সঙ্গে কথা বলতে থাকায় ফোন ধরতে পারেননি ব্লিংকেন। তৃতীয় দফায় বঙ্গভবনে নৈশভোজ চলাকালে ব্লিংকেন ফোন করে মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাদের মধ্যে আলোচনায় র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায়।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ব্লিংকেন) আরেকবার জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। দুই নেতা মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে একমত হয়েছেন। তারা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়েও মতবিনিময় করেন।’
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘র্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত দেশবাসী গ্রহণ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। এমন সম্পর্কের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে আমাদের সঙ্গে আলাপ করা উচিত ছিল। র্যাব সন্ত্রাস দমন, মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রও এসবের বিরুদ্ধে কাজ করে। র্যাবের কারণে হলি আর্টিজানের পর কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। এরা দুর্নীতিগ্রস্ত নয় বিধায় র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মানুষ মোটেও পছন্দ করেননি।’
ব্লিংকেনকে মোমেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা কোনো প্রয়োজনীয় ঘটনায় র্যাব নিয়োগ চায়। কোনো বিষয়ে অন্যান্য ফোর্স নিয়োগ করলে তখন তারা বলে র্যাব হলে সব ঠিক। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এটা আমাদের দেশের মানুষ পছন্দ করেনি।’
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপে র্যাব ও তার সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ মূল বিষয় হলেও তা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেননি আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলবে কি না, সেটা আমি ফোনে বলিনি। উনিও বলেননি। উনি বলেছেন, আমরা আলোচনা করব, একাধিক ডায়ালগ করব। বলেছেন, আগামী স্প্রিংয়ে (বসন্তকালে) ওয়াশিংটনে আলোচনা করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৬ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হাজারখানেক মানুষ মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিউটির সময় এসব মানুষ মারা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটাকে কেন বিচারবহির্ভূত হত্যা বলা হচ্ছে-এসব প্রশ্ন ব্লিংকেনকে করেছি।
আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা বলে ব্লিংকেনকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে ব্লিংকেন উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, উনি যেটা বলেছেন, এবারের যে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে, এটা অনেকটা হয়েছে কংগ্রেস ল মেকারের কারণে।
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদশের জনগণকে ব্লিংকেন অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।