এক সময়ে আমাদের দেশে বর্ষা ও শরৎকালে বিলে ঝিলে পদ্ম ফুটে প্রকৃতির শোভাবর্ধণ করত। কালের পরিক্রমায় আর মানুষের বৈরিতায় প্রকৃতির বিল ঝিল বিলুপ্ত প্রায়। আবহাওয়ারও বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না এই পদ্ম ফুল। বৈশাখের তীব্র প্রখর রোদে যখন হাহাকার করে। খরার কারণে পানির জন্য মাঠঘাট চৌচির হয়। রুষ্ট প্রকৃতির ঠিক এই সময়ে বিস্তৃর্ণ জলাভূমিতে পদ্ম গাছ গজিয়ে জানান দেয় আগত বর্ষার।
এই পদ্ম ফুল ফুটেছে লোক বসতির একটু বাইরে শ্রীবরদী উপজেলার বৈশা বিলে। কেউ কেউ বিলটিকে পদ্ম বিল বললেও এর সরকারি নাম বৈশা বিল। শ্রীবরদী পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের শেখদি মহল্লার মহিলা কলেজের পিছনে এই বিল অবস্থিত। এই বিলে অন্তত ত্রিশ একর জায়গা ছাড়াও বিস্তর বিল জুড়ে স্থান করে নিয়েছে পদ্ম ফুল। ফুটতে শুরু করেছে ফুল। স্মিগ্ধ টলটলে পানিতে পদ্ম ফুলের সমারোহ এই ঋতুর এক নান্দনিক বার্তা দিচ্ছে। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবেই পুষ্পবৃক্ষ পরিবারের এই জলজ উদ্ভিদ জন্মায়।
শরতের শুরুতেই বিশাল বৈশা বিলের বিস্তর স্থানে ফুটবে পদ্ম ফুল। বিলটি পদ্ম ফুলের লাল, সাদা ও নীল রঙে রঙিন হবে। পদ্মের স্নিগ্ধতার রঙ আর নীরব সমাগমে একাকার এখানকার প্রকৃতি। বৈশা বিলে যাতায়াত একটু কঠিন। তবু বিশুদ্ধতম এই পদ্ম ফুল দেখতে প্রতিদিন কিছু দর্শনার্থী এখন ভিড় করছে বিলের আশে পাশে। তবে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে চলে যাওয়ার সময় দর্শনার্থীরা পদ্ম ফুল ছিড়ে নিষ্ঠুরতার ছাপ রেখে যাচ্ছে। এখন অধিকাংশ পদ্ম কলি আকারে আছে ও কিছু ফুল ফুটেছে, শরতের শুরুতে সব ফুল ফুটতে শুরু করবে।
ভাদ্রে বৈশা বিল একাকার হয়ে যাবে। বৈশা বিলে এর ব্যাপ্তি থাকবে হেমন্ত কাল অবধি। সনাতন ধর্মের আসন্ন দুর্গাপূজায় এই ফুলের প্রয়োজন হয় দেবীর অর্ঘ্য হিসেবে। এই পূজাকে উপলক্ষ্য করে স্থানীয় শখানেক মানুষ পদ্ম ফুল সংগ্রহ ও বিক্রয় করে মানুষ আয় করবেন। কদিন পরে ফুটন্ত ফুলের বাহারি রূপে চোখ জুড়াতে বৈশা বিলে আগন্তক আসবে। পদ্ম কন্দ জাতী ভূ-আশ্রয়ী বহু বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ।
এর পাতা পানির ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল নিচে মাটিতে থাকে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও রং সবুজ। পাতার বোটা বেশ লম্বা, ভেতর অংশ অনেকটাই ফাঁপা থাকে। ফুলের ডাটার ভিতর অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। ফুল ঊর্ধ্বমুখী, মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুটন্ত তাজা ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। ফুল ফোটে রাত্রি বেলা এবং ভোর সকাল থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্ব পর্যন্ত প্রস্ফুটিত থাকে।
রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুল সংকোচিত হয়ে যায় ও পরবর্তীতে রৌদ্রের প্রখরতা কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। ফুটন্ত ফুল এভাবে অনেক দিন ধরে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাবে বৈশা বিলে। পদ্ম ফুলের রং মূলত লাল সাদা ও গোলাপীর মিশ্রণ যুক্ত। তাছাড়া পদ্ম ফুল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ফুল গাছ। বৈশা বিলের আশেপাশের লোকজন বলছে আগে থেকেই এই বিলে পদ্ম ফোটে। তবে এবার অনেক বেশী জায়গা নিয়ে অংসখ্য পদ্ম ফোটেছে। পদ্ম জন্মানোর স্থানে যেতে হাঁটু পানি মাড়িয়ে যেতে হয় আধা কিলোমিটার।
মানুষজনের যাওয়া আসা অনেকটা কঠিন বলে অত্যাচার কম। তাই এখানের নির্জন প্রকৃতিতে পদ্ম আনন্দেই প্রস্ফুটিত হয়। তবে কয়েক বছর ধরে কষ্ট করে হলেও কিছু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এই সময়ে পদ্ম দেখতে আসে। বিলে ক’দিন পরে মাছ ধরবে ইজারাদার। মাছ ধরার সময় অধিকাংশ পদ্ম গাছ তুলে ফেলা হবে। বিলটিতে যাতায়াতের অবস্থা সৃষ্টি করে পদ্ম সংরক্ষণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিলে মানুষজন আনন্দ পেত।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফ আক্তার বলেছেন- বৈশা বিলে অসংখ্য পদ্ম ফোটার কথা তিনি শুনেছেন এবং একবার গিয়েছিলেন। কিন্ত তখন পর্যন্ত ফুল ফুটেনি। জায়গাটি সরকারি সেহেতু সরকার থেকেই এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। সীমিত আকারে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে কেউ যেন পদ্ম গাছ ও ফুলের ক্ষতি না করে এমন একটি ব্যবস্থা করা হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রশাসন অবশ্যই সুরক্ষা করবে।