সাতক্ষীরার দুগ্ধপল্লী বলে খ্যাত জেয়ালা এলাকার সুনামকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে ভেজাল দুধ তৈরি করছেন। ক্ষতিকর জেলি, সোডা, সয়াবিন তেল, লবণ, চিনি, স্যালাইন, নিম্নমানের গুঁড়া দুধসহ মারাত্মক সব কেমিক্যালের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম দুধ। এসব দুধ নামি ব্রান্ডের প্যাকেটজাত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। সবাই অজান্তেই এসব দুধ পান করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তালায় সহজে সাধারণকে ধোঁকা দিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় একটি প্রতারক চক্র শিশু খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন টনে টনে ভেজাল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বৈধ ব্যবসার তুলনায় লাভ অন্তত ৭/৮ গুণ বেশি হওয়ায় ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সঙ্গে স্থানীয় মুনাফালোভীদের পাশাপাশি রয়েছেন দেশের দামি ব্রান্ডের স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা খাঁটি দুধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে, সিন্ডিকেটের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে প্রকৃত খামারীদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে হালাল উপায়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে খাঁটি দুধ উৎপাদন করেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না। এদিকে, সিলিং সেন্টারগুলোও অপেক্ষাকৃত কম দামে দুধ পাওয়ায় খামারিদের উৎপাদিত দুধের চাহিদায় কৃত্রিম ভাটা তৈরি করছে। ফলে বাধ্য হয়ে খামারিরাও অপেক্ষাকৃত কম দামে তাদের কাছে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় একাধিক খামারি জানান, তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রাম ইতোমধ্যে দুধ উৎপাদনের জন্য দেশময় সুনাম কুড়িয়েছে। স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় প্যাকেটজাত করে তা দেশব্যাপী সরবরাহের জন্য দেশের একাধিক নামী কোম্পানি খামার এলাকায় গড়ে তুলেছে স্ব স্ব ব্রান্ডের সিলিং সেন্টার।
প্রথম দিকে সিলিং সেন্টারগুলো খামারিদের লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখালেও পরবর্তী সময়ে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্রটি গড়ে তুলেছে ভেজাল দুধের সিন্ডিকেট। এর যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন খামারিরা।
সূত্র জানায়, চক্রটি নকল দুধ উৎপাদন করে শুধু সিলিং সেন্টারগুলোতে সরবরাহ করছে না। এ দুধের ক্রিমে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি। আর দুধের ছানা থেকে তৈরি হচ্ছে রসনা-বিলাসে বাহারি সব মিষ্টান্ন দ্রব্য।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় তালা উপজেলার জেয়ালা, আটারই, মহান্দী ও জেয়ালা নলতার কয়েকজন খামারির সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্য অত্যন্ত লোমহর্ষক ও ভয়ংকর। দেশের অন্যতম প্রধান গবাদি পশু পালন সমৃদ্ধ ও দুগ্ধ পল্লীকে পুঁজি করে প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ভয়ংকর নকল দুধের রমরমা ব্যবসা।
মূলত তাদের দেওয়া সূত্র ধরে জেয়ালা ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গবাদিপশু পালনের সঙ্গে জড়িত। মূলত খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহকারী বা ব্যবসায়ীদের সরাসরি সম্পৃক্তায় গড়ে উঠেছে কৃত্রিম দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুরে ঘুরে দেখা হয় নকল দুধ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া।