রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণার পর শুরু করা যুদ্ধই শেষ নয়, মলদোভায় রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একটি স্থল সেতু নির্মাণ করতে চান তিনি। এর ফলে খুব দ্রুতই মলদোভায় ঢুকে পড়তে পারবে রাশিয়ান সেনারা। ফলে ইউক্রেনের পর রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্র মলদোভা। এমনটাই আশংকা জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। যদিও মলদোভায় আক্রমণের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেনি রাশিয়া।
রাশিয়া মলদোভাকে হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী আনা রেভেনকো। তিনি বলেন, মুহূর্তে আমাদের উদ্বেগ, এবং সবচেয়ে বড় হুমকি হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার হুমকি।
এর আগে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন রুশ সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল রুস্তম মিনানকায়েভ।। তবে রাশিয়ার ওই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছিল মলদোভা।
মলদোভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছিল, এই বিবৃতিগুলো ভিত্তিহীন এবং মলদোভা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সমর্থন জানিয়ে আসা রাশিয়ান ফেডারেশনের অবস্থানের পরিপন্থী।
এর আগের বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়ে ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছিল, বৈঠকের সময়, পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল যে মলদোভা প্রজাতন্ত্র … একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এই বিষয়টি রাশিয়ান ফেডারেশনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গণের সবার মেনে চলা উচিত।
রুস্তম মিনানকায়েভ ঘোষণা অনুযায়ী রাশিয়ার ওই লক্ষ্য অর্জিত হলে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ভূখণ্ডের একটি সরাসরি স্থল-যোগাযোগ তৈরি হবে।
এছাড়া এটা মস্কোর সঙ্গে মলদোভায় রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্রান্সনিস্ত্রিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ তৈরি করতেও সহায়তা করবে। ট্রান্সনিস্ত্রিয়া ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় একটি ছোট অঞ্চল। এটি মলদোভার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদেরকে আলাদা দেশ হিসেবে দাবি করে।
মলদোভা ও ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থিত এ অঞ্চলটি। ১৯৯২ সালে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ছোটখাটো একটি যুদ্ধের পর ট্রান্সনিসট্রিয়াকে আলাদা করে ফেলে। ওই যুদ্ধে রাশিয়া তাদের সহায়তা করে। এরপর থেকে সেখানে প্রায় ২ হাজার রুশ সেনা ও ৩০০ শান্তিরক্ষী অবস্থান করছে।
রাশিয়ার কমান্ডার রুস্তম মিনানকায়েভ দাবি করেছেন, ট্রান্সনিসট্রিয়ার থাকায় রুশভাষী মানুষ নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। তাদেরও রাশিয়া সহায়তা করতে চায়।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন দখলের একটা প্রচেষ্টা দৃশ্যত: ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমা মদদপুষ্ট ইউক্রেন সেনাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে আক্রমণ পরিকল্পনা বদলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। যুদ্ধ শুরুর পরপরই তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত দুই পক্ষের শান্তি আলোচনার পর মনে হচ্ছিলো খুব শীঘ্রই শেষ হচ্ছে এই লড়াই। কিন্তু হতে পারে রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য পশ্চিমাদের আগ্রহের কারণে প্রলম্বিত হচ্ছে এই যুদ্ধ। বিশেষ করে মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা অনুমোদনের পর বোঝাই যাচ্ছে এই যুদ্ধ সহসা শেষ হওয়ার মতো নয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ।
ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত প্রতিনিধি পরিষদে ৩৬৮-৫৭ ভোটে বিলটি পাশ হয়। রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে এই সাহায্য অনুমোদন দেওয়া হয়। বিলটির বিপক্ষে ভোট দেওয়া ৫৭ জনই রিপাবলিকান দলের সদস্য।
প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাশ হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের আগে এটি সিনেটে যাবে।
প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হওয়ার পর বিলটিতে সিনেট দ্রুত মত দিয়ে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাবে প্রেসিডেন্টের কাছে।
এর আগে গত মার্চে ইউক্রেনকে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয় মার্কিন কংগ্রেস। নতুন সহায়তা প্যাকেজটি পাশ হওয়ায় দুই দফায় ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাসে রাশিয়ার বিজয়েও এ যুদ্ধ থামবে না বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল হেইনস এমন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।
ইউক্রেনের গোয়েন্দারা বেলারুশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক হামলা চালাচ্ছে অভিযোগ করেছে সেদেশের সরকার। ফলে ইউক্রেন বেলারুশ সীমান্তে বিপুল সেনা মোতায়েন করছে বেলারুশ। এর ফলে কার্যত ইইক্রেনের সেনারা বেকায়দায় পড়বে এবং রাশিয়ান সেনাদের জন্য সুবিধাজনক।
ভয়েস ওভার: যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা তথ্য জানিয়েছে, বেলারুশ ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মিসাইল ইউনিটকে মোতায়েন করেছে। এতে করে সেখান থেকে ইউক্রেনের সেনারা যেন নড়তে না পারে এবং দোনবাসে গিয়ে ইউক্রেনের অন্য সেনাদের সহায়তা করতে না পারে।
কোনো হামলা করা ছাড়াই ইউক্রেনীয় সেনাদের আটকে রাখার বিষয়টি মাথায় নিয়েই ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হয়েছে বেলারুশ সেনাদের।
এ ব্যাপারে ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্য বলেছে, সীমান্তের কাছে বেলারুশ সেনাদের উপস্থিতি ইউক্রেনীয় সেনাদের সেখানে আটকে রাখবে। আর এ কারণে তারা দোনবাসে সাপোর্ট অপারেশনে যোগ দিতে পারবে না।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশ এখন পর্যন্ত সরাসরি জড়িত হয়নি।
এর আগে বেলারুশের মাটি ব্যবহার করে চেরনিহিভ এবং কিয়েভে হামলা করেছিল রাশিয়া। তাছাড়া বেলারুশ থেকে ইউক্রেনের উদ্দেশে মিসাইলও ছুড়েছে তারা।
রাশিয়ার কমান্ডার রুস্তম মিনানকায়েভ দাবি করেছেন, ট্রান্সনিসট্রিয়ার থাকায় রুশভাষী মানুষ নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। তাদেরও রাশিয়া সহায়তা করতে চায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, মারিউপোলের আজভস্টালে আটকে থাকা আহত যোদ্ধাদের বের করে নিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ইউক্রেন। এ চুক্তিতে সম্মত হওয়ার মাধ্যমে আহত যোদ্ধাদের বের হওয়ার সুযোগ দিল রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহত যোদ্ধাদের রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত নোভোয়াজোভস্কের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।
এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মারিউপোলের আজভস্টালের আহত সেনাদের উদ্ধার করতে ইউক্রেনের সেনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া। তাদের উদ্ধার করার সময় সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে মারিউপোলের আজভস্টালে প্রায় ১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা ও আজভ ব্রিগেডের সদস্য আটকে আছেন বলে দাবি কিয়েভের।
এর আগে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে অনুরোধ জানিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার এ ডাকে সাড়া দেয়নি যোদ্ধারা।
রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছানোর দাবি করেছেন ইউক্রেনের সেনারা। তারা রাশিয়ার সীমান্তে একটি নীল ও হলুদ সীমান্ত পোস্ট পুনরায় স্থাপন করছেন বলে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে কিয়েভ। রোববার প্রকাশিত ভিডিওটিতে অবস্থান নির্দিষ্ট করা হয়নি, তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ফুটেজটি উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের। খবর আলজাজিরার।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী ভাদিম ডেনিসেনকো বলেন, ইউক্রেনের সেনারা উত্তরে এতটাই অগ্রসর হয়েছে যে, তারা প্রায় রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছে গেছেন। তবে
আলজাজিরা এই দাবির সততা যাচাই করতে পারেনি।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের পর রুশ সেনারা খারকিভের চারপাশ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শ্বের বৃহত্তম বার্গার চেইন ম্যাকডোনাল্ডস সোমবার জানিয়েছে,তারা রাশিয়ায় তাদের ব্যবসা বিক্রি করে দেবে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয়ের কারণ ও ব্যবসা চালানোর মতো অবস্থা না থাকায় তারা রাশিয়ায় ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৩০ বছর আগে রাশিয়ায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছিল শিকাগো ভিক্তিক বার্গার চেইন ম্যাকডোনাল্ডস। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে প্রথম হামলা করে তখন রাশিয়ায় অস্থায়ীভাবে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ম্যাকডোনাল্ডস। যেখানে তাদের ৮০০ এর বেশি দোকান আছে।
কিন্তু ওই সময় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করলেও ম্যাকডোনাল্ডস রাশিয়ায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে বেতন দিয়ে যাবে তারা।
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের যেসব দোকান আছে তার ৮৪ ভাগের মালিকানা ছিল ম্যাকডোনাল্ডসের নিজের।
ম্যাকডোনাল্ডসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তারা প্রতিবছর সারা বিশ্বের সকল দোকান থেকে যত অর্থ লাভ করত তার ৯ ভাগই আসত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। যার পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরো।
ফলে রাশিয়া থেকে ব্যবসা বিক্রি করে চলে গেলে ম্যাকডোনাল্ডসের লাভের ১০০ ভাগের প্রায় ১০ ভাগই কমে যাবে।