ফিলিপিন্সের সাবেক নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফার্দিনান্দ জুনিয়র আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত জনমত জরিপে এমনটাই আভাস মিলছে। মনে করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দের শাসনামল নিয়ে মিথ্যে প্রচারণা চালানো এর একটা বড় কারণ।১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ২ দশকেরও বেশি সময় শক্ত হাতে ফিলিপিন্স শাসন করেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। এই সময়ে গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। ১৯৭২ থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত টানা সামরিক আইন জারি রাখেন দেশে। অবশেষে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ফার্দিনান্দ মার্কোস।
স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসও কুখ্যাত ছিলেন অমিতব্যয়ী বিলাসী জীবন যাপনের জন্য। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, লাগামহীন দুর্নীতি আর গুম খুনে যখন দিশেহারা ফিলিপিন্সবাসী, তখন তার ঘরে পাওয়া যায় ৫শর বেশি গাউন আর ৩ হাজার জোড়ার বেশি দামি জুতা।
তিন দশক পর ফিলিপিন্সে আবারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মার্কোস পরিবারের। আগামী ৯ ই মে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছেন ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র, যিনি বংবং নামেও পরিচিত।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ৬৪ বছর বয়সী বংবং মার্কোসের এগিয়ে থাকার একটা বড় কারণ মনে করা হয়, বছরের পর বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কোস পরিবারের পক্ষে মিথ্যে প্রচারণা। যেখানে সমর্থকেরা একের পর এক গুজব আর ভুল তথ্য ছড়িয়ে ফার্দিনান্দকে একজন মহান শাসক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে ফার্দিনান্দ মার্কোসের শাসনামল ছিল সোনালী সময়। এছাড়া সমর্থকদের একটা বড় অংশই মনে করে, ফার্দিনানন্দ মার্কোসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। মার্কোস জুনিয়রকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে। নির্বাচনে জিতলে দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহত রাখারও ঘোষনা তার। আরও কথা দিয়েছেন মাদক মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চালু করবেন।
যদিও মার্কোসের আমলের নির্যাতিতরা বলছেন ভিন্ন কথা। সাবেক রাজনৈতিক বন্দি ক্রিস্টিনা বাগাওয়ান বলেন, ‘কোন ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সেনাবাহিনী। এরপর আমার উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। শুধু আমিই নয় হাজার হাজার মানুষকে রাতে আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেউ ফিরে আসতে পেরেছে, কেউ পারেনি। অসংখ্য প্রমাণ আছে এসবের। অথচ ওরা বলছে, এগুলো কিছুই ঘটেনি। তার ছেলে ক্ষমতায় আসলে সেইসব দিন আবারও ফিরে আসতে পারে। তবে ফিলিপিন্সবাসী কি রায় দেয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯ই মে পর্যন্ত।