সকাল থেকেই এই মানুষগুলো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন শুধুমাত্র একটু ঘোলের আশায়। যদিও কথায় বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। কিন্তু সেই ঘোল এখানে লাইন ধরে কিনতে হয়। তবে এই ঘোল কোনো যেন তেন ঘোল নয়। এর স্বাদ দুধের চাইতেও বেশি। এটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপের ঘোল, যে ঘোলের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।
সারা বছর এখানকার ঘোল ও মাঠার চাহিদা থাকলেও রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এখানকার তৈরি ঘোল-মাঠা দামে সস্তা আর খেতে সুস্বাদু ও মানসম্মত হওয়ায় এর চাহিদাও ব্যাপক।
প্রতিদিন ভোরে আশপাশের গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় দুধ । নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দেওয়ার পর সেটি সারারাত ধরে রাখা হয় বেশ কয়েকটি পাত্রে। সকালে জমে থাকা ওই দুধের সঙ্গে চিনি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মিশিয়ে তৈরি হয় ঘোল ও মাঠা । বছরের অন্য সময়ে প্রতিদিনের বিক্রিবাট্টা ১৫ থেকে ২০ মণ। কিন্তু রোজার বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ গুণ।
সিরাজগঞ্জে প্রচুর গরুর খামার থাকায়, দুধের অভাব নেই। সুতরাং অনেকটা কম দামে বিক্রি করা হয় এই ঘো্ল। প্রতি লিটার ঘোল ৬০ টাকা এবং মাঠা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখানে। এখানকার তৈরি ঘোল ও মাঠা দামে সস্তা আর খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে পুরো জেলা জুড়ে। প্রতিদিনই দুরদুরান্ত থেকে সলপে ঘোল ও মাঠা কিনতে আসছেন ক্রেতারা। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বাইরে পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এই ঘোল-মাঠা।
উল্লাপাড়ার সলপ রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে এই ব্যবসা গড়ে উঠেছে বলে এটি ‘সলপের ঘোল’ নামে পেয়েছে পরিচিতি। এর পেছনের ইতিহাস শতবর্ষের। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে উল্লাপাড়ার সলপ এলাকায় নির্মাণ করা হয় রেলওয়ে স্টেশন। এর দুই বছর বাদে ১৯২২ সালে এই স্টেশনের কাছেই ঘোল ও দধির ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় সাদেক আলী খান নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন দুই ছেলে আব্দুল খালেক খান ও আব্দুল মালেক খান। বর্তমানেও বংশানুক্রমেই চলছে এই ঘোলের ব্যবসা। মান ভালো থাকায় দিন দিনই সমৃদ্ধ হচ্ছে এই সলপের ঘোলের বাণিজ্য।
রমজান মাসে প্রতিদিন এখানকার কয়েকটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ মণ ঘোল ও মাঠা । পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রায় কোটি টাকার উপরে ঘোল মাঠা বেচা-কেনা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।