মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামটি এখন পরিচিত মুড়ি গ্রাম হিসেবে। এই গ্রামের রাজবংশী ও হালদার সম্প্রদায়ের ২০ থেকে ২৫ টি পরিবার যুগযুগ ধরে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করে আসছে। মাঝিপাড়ায় সারাবছর ধরেই চলে মুড়ি ভাজার কাজ। তবে রমজান মাসে এই মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। যুগ যুগ ধরে এই পরিবারগুলো মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পরিবারগুলোতে একজন নারীই মুড়ি ভাড়ার মূল ভূমিকায় থাকেন। পুরুষসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের সহযোগিতা করে থাকেন।
স্থানীয় জাতের ময়না-টিয়া ধান দিয়ে তৈরি মুড়িতে নেই কোন রাসায়নিক ক্যামিকাল। চালের সাথে শুধু মাত্র লবণ পানি দিয়েই তৈরি হয় এই মুড়ি। প্রথমে লবন পানি দিয়ে চাল ভেজে নিতে হয়। চাল ভাজার পাশাপাশি অপর মাটির পাত্রে ভারী ও চিকন বালির মিশ্রন গরম করতে হয়। এরপর মাটির অপর পাতিলের মধ্যে গরম বালি ঢেলে সঙ্গে সঙ্গে লবণ পানি মেশানো ভাজা চাল ঢেলে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের নাড়াচাড়ায় তৈরি হয়ে যায় মুড়ি।
সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির রয়েছে বিশেষ চাহিদা। প্রতিকেজি মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে। বায়রা হাটে সপ্তাহে একদিন এই মুড়ি বিক্রি করেন কারিগররা। একেকজন কারিগর সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মণ মুড়ি বিক্রি করেন। এতে সবখরচ বাদ দিয়ে ৫/৬ হাজার টাকা লাভ হয় তাদের। ধান ও লাকড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় পাশাপাশি পরিশ্রমের তুলনায় লাভ কম হওয়ায় অনেকেই ছেড়েছেন পৈত্রিক এই পেশা।
মাঝিপাড়ার ঐহিত্যবাহী হাতে ভাঁজা মুড়ি শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জিন্নাহ। মেশিনের তৈরি মুড়ির কাছে ঐহিত্য নিয়ে টিকতে পারছেনা মাঝিপাড়ার মুড়ি তৈরির কারিগররা।