রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের মুসলিমদের রোজা ও ইফতার খুবই কষ্টে কাটছে। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবছর এই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে সংযমের সঙ্গে ইবাদত করে থাকেন। কিন্তু ইউক্রেনের যে পরিস্থিতি, তাতে দেশটির মানুষের ভাষ্যমতে, খুবই কষ্টে রমজান কাটছে তাদের।
নিয়ারা মামুতোভা বলেন, আপনি যখন সব সময় সাইরেনের আওয়াজ শুনছেন, ধ্বংস হওয়া স্কুল, হাসপাতাল এবং বাড়ির ছবি দেখছেন তখন কিভাবে স্বাভাবিক থাকবেন আপনি। আর মরদেহ ও পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর দেখে অসুস্থ হয়ে যাই আমি। এসব দেখে মানসিক চাপে ভুগি। রমজানে এতটা কষ্ট।
নিয়ারা একজন জাতিগত তাতার। তিনি ২০১৪ সালে যখন রাশিয়া ক্রাইমিয়িা দখল করে তখন সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। তার মতো একই কথা বলেন ইউক্রেনের আরেক নারী কিয়েভের বাসিন্দা ভিক্টোরিয়া নেসটারেংকো।
তিনি বলেন, যুদ্ধের ভয়ঙ্কর দৃশ্য সব সময় মাথায় ঘুরছে। কিয়েভের কাছে রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে শিশুসহ অনেক বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। এবার রমজানে সেই পবিত্র আবহ অনুভব করতে পারছি না। মন খুবই বিষাদগ্রস্ত।
ইউক্রেনে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ মুসলমান। দেশটিতে বেসরকারি হিসেবে অনুমান করা হয় মুসলিমদের সংখ্যা এক শতাংশের কাছাকাছি। গত দুটি রমজানে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সেভাবে কোনো উৎসব করতে পারেননি তারা। এ কারণে এবার খুব আগ্রহ নিয়ে রমজানের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
ভিক্টোরিয়া নেসটারেংকো বলেন, সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে নিজেকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করা। আমার আরও বেশি পবিত্র কোরআন পাঠ করা প্রয়োজন এবং আরও বেশি সময় নিয়ে নামাজ পড়া প্রয়োজন। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে ইবাদতে মন দেয়া খুব কঠিন। কেননা, আমরা মানসিক চাপ ও অবসাদের মধ্যে রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নামাজের জন্য হয়তো ঠিকই সময় বের করছি। যুদ্ধের জন্য এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা মাফ রয়েছে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে না পারলে সেটা পরে কাজা করা যায়। দিনেরটা সন্ধ্যায় কিংবা সন্ধ্যারটা রাতে আদায় করা যায়। এভাবে ধর্মীয় ফরজ কাজ রক্ষা করতে পারি আমরা।
এবার রমজানে নিয়ারা তার শিশু কন্যাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন বিধায় রোজা রাখছেন না। তবে ভিক্টোরিয়া ঠিকই রোজা রাখছেন। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবারের রমজানে ধর্মকর্মে তাদের মনোনিবেশ হতে বেশ সমস্যা হচ্ছে।
হালাল মাংসের সংকট: ইউক্রেনে যেসব মানুষ মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে তাদের জন্য খাবার রান্নায় সাহায্য করেন নিয়ারা। তিনি বলেন, আমরা সচরাচর যেসব খাবার খাই সেরকম খাবারই রান্নার চেষ্টা করি। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে হালাল মাংস পাওয়া যায় না। তবে মাঝে মধ্যে কিছু হালাল মুরগী পাওয়া যায়।
নিয়ারা আরও বলেন, তুরস্কের মতো কিছু দেশের মুসলিম ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্য সাহায্য পাঠায়। পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিমরা কিছু রান্নার হাঁড়ি-পাতিল ও বাসন-কোসন দিয়ে সহযোগিতা করেন।
তবে ভিক্টোরিয়া ফ্রিজিং মাংস ও মাছ দিয়ে কোনো রকমে রান্না চালিয়ে যাচ্ছেন।