‘ইউক্রেনের বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চাইছি’ কলকাতা বইমেলায় বললেন এক রুশ কন্যা।
এই রুশ কন্যা কলকাতা বইমেলায় রাশিয়া প্যাভিলিয়নে মস্কোর অন্যতম সাংস্কৃতিক দূত অ্যানা মোরেভা। তিনি মস্কোর উপকণ্ঠে করোলিয়ভ শহরের বাসিন্দা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়।
মস্কোর স্টেট লিঙ্গুইস্টিক্স ইউনিভার্সিটির মিডিয়া কমিউনিকেশনসের শিক্ষিকা ও সম্পাদক অ্যানার ছাত্রছাত্রী, বন্ধুরা ইউক্রেন জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করছে রুশ মেয়েটির।
অ্যানা বলেন, আমার ভিতরটা ইউক্রেনের সব বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইতে আকুল হয়ে আছে! যদিও আমি অসহায়, যা ঘটছে, ঘটে চলেছে, তাতে তো আমার হাত ছিল না। আপনারাও তো ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের ভাঙন দেখেছেন। যুদ্ধ, শত্রুতা, রাজনীতি— কোনও কিছুই রাশিয়া-ইউক্রেনের যৌথ ইতিহাস, সংস্কৃতি ভাগ করতে পারে না।
কেন এই যুদ্ধ? রাজনীতি? ষড়যন্ত্র? আত্মরক্ষা? শব্দের ঘোরপ্যাঁচে ঢুকতে চান না অ্যানা। তবে যুদ্ধ খুব খারাপ, একেবারে চরম পদক্ষেপ বলতেও দ্বিধা নেই তার। ইউক্রেনকে রুশ-বিরোধী শক্তি ব্যবহার করছে বলে অ্যানা মনে করেন। আবার যুদ্ধ মানেই নিরীহদের প্রাণহানি, বোমা বিস্ফোরণ, ক্ষয় বলতে বলতে যেন ভয়ে আঁতকে ওঠেন তিনি।
এই যুদ্ধের জন্য অবশ্য এক কথায় কারও ওপরেই একতরফা দোষ চাপাতে চান না অ্যানা। কিন্তু রাশিয়ায় যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদের নৈতিক অধিকারটুকু অস্বীকার করছেন না তিনি। রাশিয়ার সাংবাদিক ইউনিয়নের মস্কো অঞ্চলের একজন সিনিয়র সদস্য অ্যানার কথায়, যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অঙ্গ।
অ্যানা নিজেও রুশ সরকারের প্রকল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরোগ্য নিকেতন’ রুশ ভাষায় অনুবাদের কাজে (অনুবাদক দেবস্মিতা মৌলিক) একজন উপদেষ্টা।
অ্যানা আরও বলেন, গোগোল ছাড়াও আমার শহর যার নামে, সেই সের্গেই করোলিয়ভও ইউক্রেনের। তিনিই মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের ‘গুরু’! মৃত্যুর পরে করোলিয়ভও মস্কোয় ক্রেমলিনে শায়িত।’ যুদ্ধের ছায়াতেও ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বোধে বইমেলার রুশ-ইউক্রেন বন্ধুত অটুট।