ব্রিটেনের রাজধানী লণ্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল মেট্রো স্টেশনের সাইনবোর্ডে স্থান করে নিল বাংলা ভাষা। লন্ডনের ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন অথরিটির পক্ষ থেকে এই স্টেশনের নাম ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলাতেও লেখার সিদ্ধান্ত নোয়া হয়। আর সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নামে বাংলা সাইনবোর্ডও বসে গিয়েছে। ইংরেজদের দেশে বাংলার এমন উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখে আপ্লুত আমবাঙালি। সোমবার এ নিয়ে টুইট করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশ্বের দরবারে সহস্রবর্ষপ্রাচীন ভাষার এই সম্মান দেখে গর্বিত তিনি।
বৃহস্পতিবার থেকে পূর্ব লন্ডনের বাংলাভাষী অধ্যুষিত এই মেট্রো স্টেশনের নাম বাংলায় লেখা হয়েছে। বাংলা ভাষা লন্ডনে এমন সম্মান লাভ করায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। বাঙালিদের সম্মান জানিয়ে যে সিদ্ধান্ত লন্ডন প্রশাসন নিয়েছে তাতে খুশি রাজ্য সরকার। প্রবাসী বাঙালিরা তো বটেই লন্ডনে মেট্রো স্টেশনের নাম বাংলা ভাষায় দেখে উচ্ছ্বসিত এপার, ওপার উভয় বাংলার মানুষই। বহু প্রবাসী বাঙালি সাইনবোর্ডের ছবি তুলেছেন। সেই ছবি শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। লণ্ডনে বাংলা সাইনবোর্ড সেখানকার বাঙালিদের মধ্যে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে! স্টেশনের প্রবেশপথেও বাংলায় লেখা রয়েছে, ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে আপনাকে স্বাগত।’
ইংরেজ শাসনকাল থেকেই লন্ডনের এই এলাকায় বাঙালিরা বসবাস করতে শুরু করেন। আজকের দিনে এলাকাটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষই বাংলাভাষী। এই অঞ্চলকে অবিভক্ত বঙ্গদেশ বললেও অত্যুক্তি করা হয় না। স্থানীয় বাঙালিদের বহুদিনের দাবি মেনে তাঁদের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান জানাতেই লন্ডনের প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের সংস্কারকাজ চলছে। হিথ্রো বিমানবন্দরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে চালু হতে যাওয়া কুইন এলিজাবেথ লাইনের সংযোগ থাকছে এই স্টেশনে। সংস্কারকাজ চলার এই সুযোগে স্টেশনের নামটি বাংলায় লেখার দাবি ওঠে।
স্থানীয় শ্যাডওয়েল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী এ দাবি জানিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র, লন্ডন মেয়র, স্থানীয় এমপিসহ টিএফএলের কাছে চিঠি লেখেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশনের (বিবিপিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও কাউন্সিলর আব্দাল উল্লাহ ও সাপ্তাহিক জনমতসহ অনেকেই এ নিয়ে দাবি তোলেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস এই দাবিতে একাত্মতা পোষণ করেন। শুরুতে লন্ডন মেয়র অফিস ও টিএফএল বাজেটের অভাব দেখিয়ে দাবিটি নাকচ করে দেয়। তবে মেয়র জন বিগস স্থানীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এর খরচ বহন করার প্রস্তাব দিলে টিএফএল তাতে রাজি হয়। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টিএফএল আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীর চিঠির যে জবাব দিয়েছিল তাতেই বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘অনেক আগে থেকে ভারতীয় অধ্যুষিত সাউথহল স্টেশনের নামটি হিন্দিতে লেখা আছে, যা দেখে আমার মনে হতো, কেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় স্টেশনের নাম বাংলায় থাকবে না। সে কারণেই আমি চিঠি লিখেছিলাম।’
একই চিঠিতে স্থানীয় কেব্ল স্ট্রিটের একটি বাসস্টপে বসার বেঞ্চ ও ছাউনির অনুরোধও করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই অনুরোধও রাখা হবে বলে জানিয়েছে টিএফএল।
সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, ‘বাংলাদেশি অভিবাসনের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। যাঁরা বাংলা পড়তে পারেন না, তাঁদের কাছেও এই ভাষার শক্তি ও সামর্থ্যের কথা পৌঁছে যাবে।’