দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আর রাতে চা বিক্রেতা। সারাদিন ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যা নামতেই ভ্যান নিয়ে বের হন চা বিক্রির উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিক্রি করেন চা । তারপর আবার বসেন পড়তে। এভাবেই দিন কাটছে নাজমুল হোসেনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এই নাজমুল হোসেন।
বাইট, নাজমুল: একসময় টিউশনি করে পড়ার খরচ যোগাতাম, কিন্তু তার চেয়ে চা বিক্রিতে বেশি আনন্দ পাই।
চা বিক্রির এই উপার্জনেই নাজমুল নিজে চলেন, সহায়তা করেন পরিবারকে। মায়ের জমানো হাজার চারেক টাকা আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে প্রথমে শুরু করেন মুঠোফোন রিচার্জের কাজ। বসতেন মিরপুর ১০ নম্বরের কাছেই। কিন্তু প্রতিদিন মিরপুরে যাওয়া-আসা, দোকান চালানো, পড়াশোনা…ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তাই মুঠোফোনে
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে অনেকের মতো নাজমুলও শুরু করেছিলেন টিউশনি। কিন্তু মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিলেন বলে সম্মানী পেতেন কম। সেমিস্টার ফাইনাল কিংবা জরুরি প্রয়োজনেও অনেক সময় মিলতোনা কোনো ছুটি। ঠিক এই ব্যাপারগুলোই মানতে পারেননি নাজমুল। তিনি চিন্তা করলেন এমন কিছু করা উচিত, যেখানে থাকবে তাঁর স্বাধীনতা।
অভাব–অনটনের কারণে একবার ভবেছিলাম, পড়াশোনেই ছেড়ে দেবেন। তারপর যেভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি চা দোকান দেয়ার কথা ভাবলেন।
প্রথম দিন তাঁকে দেখে বন্ধু, পরিচিতজনেরা হয়েছিলেন অবাক । বলছিলেন নানা কথা। কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছিলেন চা বিক্রি না করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে চলতে। কিন্তু অন্যের কাছে হাত পাতার চেয়ে বেছে নিলেন কাজটাকেই।
এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। টাকা জমাতে পারলেই কিস্তিতে একটা মোটরবাইক কিনে নেব। কোনো একটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের হয়ে দিনের একটা সময় মোটরবাইক চালাব।’ অন্যসময় পড়াশোনা করবো।
ভয়েস: শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের এক নিভৃত গ্রামের ছেলে নাজমুল হোসেন। তবে এখন আর সেই বসতভিটা নেই। ২০১২ সালে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ভিটাবাড়ি। নিরুপায় হয়ে নাজমুলের বাবা সাত্তার হাওলাদার ও মা নাজমা বেগম পাড়ি জমান গাজীপুরে। চার সন্তান নিয়ে ঘোর সংকটে পড়েছিলেন তাঁরা।শেষমেষ সামান্য পুঁজি নিয়ে ছোট একটা মুদিদোকান দেন বাবা। ওই দোকান দিয়েই সংসার চলে তাঁদের। গাজীপুর সদরের হাতিমারা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এখন থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে।
স্থানীয়: নাজসুল আমাদের প্রেরণা। সে দেখিয়েছে কোনো কাজই ছোট নয়, যদি সেটা সৎ পথের হয়। আমরা বিশ্বাস করি একদিন সে অনেক বড় হবে।