শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধীই নয়, বিকলাঙ্গ একটি মাত্র হাত দিয়েই অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আফজাল হোসাইন। এক হাতেই দিচ্ছেন ফার্মেসী সেবা, আবার মোবাইলে লোড দিচ্ছেন ওই একটা হাত দিয়েই।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের সন্তান এই আফজাল। একটা সময় ছিলো যখন প্রতিবন্ধী হওয়ায় অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন ঘাটে-ঘাটে। কিন্তু তাঁর অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে সবকিছুই। আজ আর তিনি সমাজের বোঝা নন, বরং সম্পদ।
স্থানীয় জামেয়া ইসলামিয়া কর্মধা টাইটেল মাদরাসা থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এই আফজাল। এরপর ভর্তি হলেন সিলেট খাস্তবীর দারুস সালাম মাদরাসায় একাদশ শ্রেণীতে। এরপর সিলেট বিশ্বনাথের জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদরাসা থেকে সম্পন্ন করেন টাইটেল। লেখাপড়ায় এতোদূর যাওয়ার পেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে ছিলেন আফজালের মা।
বাড়ি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্বের কারণে লজিং থাকতে হয় আফজালকে। কিন্তু পঙ্গুত্বের কারণে সেই লজিং প্রাপ্তিও ছিলো অনেকটা দুরুহ। কেননা তিনি ছিলেন প্রতিবন্ধী।
বাইট, আফজাল বলবেন লজিং জীবনের দু:সহ অভিজ্ঞতার কথা।
শত প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে ঠিকই সাফল্যকে ওই এক হাতেই তালবন্দি করেন আফজাল। পড়াশোনা শেষ করে মায়ের আদেশে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। শুরু করেন ফার্মেসী ব্যবসা।
শুধু ঔষধ বিক্রিই নয়। রোগীদের ডিজিটাল প্রেসার মেশিন দিয়ে প্রেসার নির্ণয় করে যাচ্ছেন তিনি। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফার্মেসী সেবা অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় মানুষদের জন্য তার সেবা চব্বিশ ঘণ্টা রয়েছে বললেই চলে। যেকোনো সময় প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যায় তার কাছে। শুধু তাই নয়, অন্যদিকে মোবাইল ফোনের বাটন টিপে নিমিষেই বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এমন সব কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় এলাকার মানুষ।
প্রতিবন্ধীতা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়, সেটাই প্রমাণ করলেন এই আফজাল। ছোট বেলায় বাবাকে হারানো অবহেলিত শিশুটি মায়ের দোয়া এবং সহযোগিতায় আজ এতোদূর। তার অদম্য প্রচেষ্টার কারণে
দুই বছর সিলেট জিন্দাবাজারস্থ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই আফজাল।