বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু করতে পারল না পণ্য রপ্তানি। ফলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাসেই ধসের মুখে পড়ল দেশের রপ্তানি খাত। গত জুলাইয়ে ৩৪৭ কোটি ডলারের বা ২৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ কম।
রপ্তানি আয়ে ধস নামলেও জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানিবাহী কনটেইনার পরিবহনে রেকর্ড হয়েছিল। গত মাসের প্রথম ২৫ দিনে রপ্তানি পণ্যবাহী ৭১ হাজার ২৪৩ একক কনটেইনার পরিবহন হয়। তার আগের মাসে সেটি ছিল ৪৪ হাজার ৭৭৬ একক কনটেইনার। কনটেইনার পরিবহন ৫৯ শতাংশ বেশি হলেও রপ্তানি আয়ে তার প্রভাব নেই। জুনের ৩৫৭ কোটি ডলারের বিপরীতে জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ৩৪৭ কোটি ডলার। এটির সঠিক কোনো ব্যাখ্যা আপাতত না পাওয়া গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জুলাই শেষে রপ্তানি পণ্যবোঝাই প্রায় ১১ হাজার একক কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে আটকে ছিল।
অর্থবছরের প্রথম মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই আয় তার আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। করোনার মধ্যেও গত বছর ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চলতি অর্থবছরের জন্য পণ্য রপ্তানি আয়ে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলের মতো শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের আয় কমেছে। কেবল চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। সে জন্যই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ২৮৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাইয়ে ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। যদিও করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহ কারখানা বন্ধ ছিল।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম ১৯ দিনে ১৬৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। গত মাসের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২২২ কোটি ডলারের পণ্য। তারপর তো ঈদ ও বিধিনিষেধের কারণে কারখানা বন্ধ ছিল। ঈদের আগে প্রস্তুত করা পণ্যও পরে রপ্তানি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যেটি হয়েছে, খারাপ না। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক পণ্য রপ্তানির অপেক্ষায় আছে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ক্রয়াদেশ ভালো থাকায় চলতি মাস থেকে রপ্তানি বৃদ্ধির পাওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। তবে বিধিনিষেধে সব শ্রমিক উপস্থিত হতে না পারায় পুরোদমে কারখানাগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। আবার কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহেও কিছু সমস্যা আছে।
বিদায়ী অর্থবছর পাট ও পাটজাত পণ্য ভালো করলেও আবার ধসের মুখে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৬ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম। যদিও বিদায়ী বছর পণ্যটির রপ্তানি বেড়েছিল ৩১ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। আবার ৯ কোটি ২৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্যটির রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া ৯ কোটি ৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৬৪ শতাংশ।