উন্নত জীবনের স্বপ্নে সাত বছর আগে মোমেনা বেগমের স্বামী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। যাওয়ার সময় ১৮ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল রোপণ করা ছিল তাঁদের। ওই ফুলখেত নিজ হাতে পরিচর্যা করেন মোমেনা। কয়েক মাস পর সেই ফুল ১ লাখ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তাতে লাভ হয় ৮০ হাজার টাকা। এরপর মোমেনাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। লাভের টাকায় পরের বছরই চাষের জমি বাড়িয়ে ৬৬ শতকে উন্নীত করেন। এভাবে ফুল চাষের লাভের টাকায় চাষের জমি বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু জমিও কিনেছেন। সব মিলিয়ে মোমেনার এখন নিজের ১ একর ৪০ শতক জমিতে ফুলের চাষ করছেন।
ফুল চাষের লাভের টাকায় চাষের জমি বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু জমিও কিনেছেন। সব মিলিয়ে মোমেনার এখন নিজের ১ একর ৪০ শতক জমিতে ফুলের চাষ করছেন।
মোমেনা বেগম বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার স্বামী দীন মোহাম্মদ বিদেশে যান। বিদেশ গিয়ে প্রথম পাঁচ বছর তিনি কোনো টাকা পাঠাতে পারেননি। এরপর কিছু কিছু টাকা পাঠানো শুরু করেন। তবে করোনা শুরু হওয়ার পর তাঁর টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফুল ও সবজি চাষ করে আমি সংসারের হাল ধরেছি। এ সময়ে বড় ছেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন। ছোট ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করানোর পর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সব মিলিয়ে এখন খুব ভালো আছি। ফুল চাষের লাভের টাকায় সম্প্রতি বাড়ির পাশে নতুন করে ২১ শতক চাষের জমি কিনেছি। বাড়িতে চারটি গরুর খামার রয়েছে। খামারে বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ট বসানো আছে। ওই গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজ চালানো হয়। ইউটিউব দেখে আমি এসব শিখেছি।’
মোমেনা বেগমের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শরীফপুর গ্রামে। ২৬ শতক জমির ওপরে প্রাচীরঘেরা একতলা বাড়ি। মোমেনা নিজে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও ফুল চাষের টাকায় ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেই চাষাবাদ দেখাশোনা করেন। সকালে নিজ উদ্যোগে ভ্যানে করে বিক্রির জন্য গদখালীর পাইকারি ফুলের মোকামে পাঠান। পরে নিজে বাজারে গিয়ে ব্যাপারীদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেন।
মোমেনা জানান, মোকামে নারীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ডায়েরি আর কলম দিয়ে ফুলসহ ভ্যানচালকের মোকামে পাঠান। ব্যাপারীরা ওই ডায়েরিতে ফুলের দাম লিখে দেন। পরে বাজারে গিয়ে আমি টাকা নিয়ে আসি। তিনি বলেন, গদখালী বাজারে ফুলের কোনো আড়ত নেই। তাই ফুল বিক্রির টাকা পেতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। বাকিতেই ব্যাপারীদের কাছে ফুল বিক্রি করতে হয়। পরে সেই টাকা তুলতে ঘুরতে হয় তাদের পেছন পেছন। আবার আড়ত না থাকায় অনেক সময় ব্যাপারীরা যে দাম ধরেন, সেই দামেই ফুল বিক্রি করতে হয়।