ইউক্রেনকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করার কোনো লক্ষ্য রাশিয়ার নেই। স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়ার কাছে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এমনটাই দাবি করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। খবর তাসের
২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেনের নাৎসি ভাবধারার প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ দেখতে চাই, নাৎসি মতাদর্শমুক্ত ইউক্রেন দেখতে চাই।’
পেসকভ আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, ইউক্রেন যে নিরপেক্ষ তা তাদের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করবে। এমনকি যেসব অস্ত্র ইউরোপে নিরাপত্তা ভারসাম্যকে বদলে দিতে পারে, সেসব অস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহ করা যাবে না।’
পেসকভ বলেন, যেহেতু দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে (ডিপিআর, এলপিআর) রাশিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই তাদের প্রতি বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মস্কোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, কিয়েভের কর্মকাণ্ড ডিপিআর এবং এলপিআরের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই রাশিয়া কিয়েভকে নিরস্ত্র করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনপিপি) স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছে বলে জানান পেসকভ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ‘প্রাণ’ পারমাণবিক চুল্লিতে কখনোই স্পর্শ করা হয়নি বলে জানান পেসকভ। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে ও কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকি নেই উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী একদল যোদ্ধা রাশিয়ার একটি টহল দলের ওপর হামলা চালিয়ে উসকানি দেয়। এর জবাব দেয় রাশিয়া।
ইউক্রেনের স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ভোররাতের দিকে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস পরে জানায়, আগুন নেভানো হয়েছে ও কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেন, ইউক্রেনের নাশকতাবাদী একটি গোষ্ঠী এনপিপির কাছে রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের টহল দলের ওপর গুলি ছুড়ে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, কিন্তু নাশকতাবাদীরা চলে যাওয়ার আগে সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যায়।
পেসকভ বলেন, মস্কো আশা করে, তৃতীয় দফা বৈঠকে রাশিয়ার অবস্থানের বিষয়টি কিয়েভ শুনবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সেনা অভিযানের সমাপ্তি টানতে এটিও একটি শর্ত। পেসকভের দেওয়া তথ্যমতে, বেলারুশে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো বৈঠকে বসার অপেক্ষায় আছে মস্কো। এর আগের দুটি বৈঠক থেকে কার্যত কোনো সফলতা আসেনি।
রাশিয়ার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পেসকভ বলেন, মস্কো এটির জন্য প্রস্তুত ছিল। কারণ, দেশটি আগেও নিষেধাজ্ঞাসহ এধরনের আচরণের মুখোমুখি হয়েছিল। তিনি এ–ও বলেন, রাশিয়া বরাবরই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সব সমস্যা কূটনৈতিকভাবে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
ন্যাটো দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আক্রমণাত্মক বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে যুদ্ধ–সতর্কতায় রাখার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কিছু মস্কো কখনো করে না। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল শুধু রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার স্বার্থ নিশ্চিত করা।