দেশের তিনজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, চা-শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরির বিধান মানা হচ্ছে না। এ শিল্পের স্বার্থেই চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো দরকার। সরকার উন্নত অর্থনীতির যে আকাঙ্ক্ষার কথা বলছে, তা চা-শ্রমিকদের মতো জনগোষ্ঠীগুলোকে পেছনে ফেলে রেখে অর্জন করা সম্ভব না।
গতকাল রোববার ‘চা-শ্রমিকদের মজুরি: বর্তমান কাঠামো ও চলমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে অর্থনীতিবিদেরা এ কথা বলেন। তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (এসইএইচডি), পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও আইনজীবীরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, চা-বাগানে শ্রমিকেরা দৈনিক ও মাসিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। চা-শ্রমিকেরা এখন দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। এর বাইরে একজন শ্রমিক স্বল্পমূল্যে চাল বা আটা পান। সরকারের এ বছরের সবশেষ মজুরিবিষয়ক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা হতে হবে। মজুরি ছাড়াও দেশের শ্রম আইনের অনেক বিষয় চা-বাগানগুলোতে মানা হয় না। বাগানগুলোতে চা-শ্রমিকেরা অনেকটা ‘কৃতদাসের’ জীবন যাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘সিলেটের একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের শুধু খাদ্যসামগ্রীর জন্য মাসে সাড়ে ১৪ হাজার টাকার দরকার। চা-শ্রমিকেরা মজুরি পান তার অনেক কম। এর বাইরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আরও কিছু চাহিদা আছে, যা পূরণ হচ্ছে না।’
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, চা-বাগানের মালিকেরা শ্রমিকদের মজুরি কম দিয়ে বেশি মুনাফা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার সুযোগ আছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা বলছি। কিন্তু একটি জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না।’
সেমিনারে মূল উপস্থাপনায় এসইএইচডির পরিচালক ফিলিপ গাইন জানান, নগদ ও বাড়তি সুবিধা মিলে একজন চা-শ্রমিক বর্তমানে দৈনিক সর্বোচ্চ ২০০ টাকা মজুরি পান। অন্যদিকে মালিকপক্ষ দাবি করে, তারা দৈনিক ৪০৩ টাকা মজুরি দেয়। ফিলিপ গাইন আরও জানান, বর্তমানে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১৫৮টি চা-বাগানে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৪ জন শ্রমিক কাজ করেন।