ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি। দীর্ঘ তদন্তে এ হয়রানির তথ্য উঠে আসে। এ তথ্য প্রকাশের পর ভুক্তভোগীরা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
ভ্যাটিকান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তদন্তে বেরিয়ে আসা চাঞ্চল্যকর ঘটনা শুনে পোপ ফ্রান্সিস কষ্ট পেয়েছেন এবং ভুক্তভোগীদের জন্য গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগীদের নিয়ে গঠিত সাবেক একটি সংস্থার প্রধান ফ্রাঙ্কোয়া ডেভাক্স তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় দুবার বলেছেন, অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটা বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, নৈতিকতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও শিশুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অলিভিয়ার স্যাভিনাক নামে এক ভুক্তভোগী প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনকে ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ফরাসি গির্জা এরই মধ্যে ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে, যা আগামী বছর থেকে শুরু হবে। ভুক্তভোগীদের কয়েকটি সংগঠন বলছে, তারা তদন্তের বেরিয়ে আসা তথ্যের ভিত্তিতে গির্জার স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া আশা করছেন।
গত মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় ১৯৫০ সাল থেকে দুই লাখ ১৬ হাজার শিশুকে যৌন হয়রানি করা হয় বলে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ছেলে শিশু। বিশ্বব্যাপী কিছু ক্যাথলিক গির্জার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার মধ্যেই এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তদন্তের প্রধান কর্মকর্তা বলেছিলেন, কমপক্ষে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ ক্যাথলিক যাজক ও পাদ্রী শিশুদের ওপর নিষ্ঠুর যৌন হয়রানি চালান। ফরাসি গির্জার একজন সিনিয়র ব্যক্তি এ ঘটনাকে লজ্জাজনক ও ভয়াবহ বলে অভিহিত করে ক্ষমা চেয়েছেন।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের গির্জায় হয়রানির শিকার শিশুদের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ সদস্যরা যেমন ক্যাথলিক স্কুলের শিক্ষকরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রায় আড়াই হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই ছেলে শিশু, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।
২০১৮ সালে ফরাসি ক্যাথলিক গির্জা এ তদন্তের অনুমোদন দেয়। আদালত, পুলিশ, গির্জার নথি, ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি ও প্রকাশ হতে আড়াই বছর সময় লাগে।