তুরস্কের হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক, যা আগে ওয়াশিংটনের কাছে সীমাবদ্ধতার কারণ ছিল, তা এখন হয়ে উঠেছে ভূ-রাজনৈতিক সম্পদ। হামাসকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার চুক্তি মানতে রাজি করাতে তুরস্কের ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বাড়িয়েছে, যা ইসরায়েল ও অন্যান্য আরব দেশকে উদ্বিগ্ন করেছে।
প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের চূড়ান্ত শর্ত ছিল ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি। তা না দিলে হামাসের ওপর ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ চালানো হবে। এতে হামাসের নেতারা রাজি ছিলেন না। তবে তুরস্ক, যাকে তারা রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে দেখেছে, চুক্তি মানতে চাপ দেওয়ায় অবশেষে তারা সম্মত হয়।
হামাসের চুক্তি মেনে নেওয়ার পর ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতাদের মধ্যে একজন। তিনি একজন নির্ভরযোগ্য মিত্র। যখনই প্রয়োজন, তিনি পাশে থাকেন।’ এরদোগানের চুক্তি স্বাক্ষর তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেওয়ার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে। এরদোগান প্রায়শই অটোমান সাম্রাজ্যের সময়কালের সম্পর্ক ও নেতৃত্বের উল্লেখ করেন। এখন তুরস্ক আশা করছে, এ কূটনৈতিক সাফল্যকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে, যেমন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়, মার্কিন শাস্তি নরম করা এবং সিরিয়ায় নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা।
এরদোগানের সঙ্গে ট্রাম্পের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে বৈঠক চলতি কূটনৈতিক পুনঃস্থাপনার সূচনা করেছিল। বৈঠকে ২০২০ সালে তুরস্কের রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার কারণে আরোপিত মার্কিন শাস্তি, সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনী নিয়ে তুরস্কের প্রভাব বিস্তার, এবং অন্যান্য বহুপক্ষীয় ইস্যু আলোচিত হয়।
গাজার চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাবশালী অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি এবং তুরস্ক, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস চুক্তি মেনে নেয়। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।
তুরস্কের ভূমিকা ইসরায়েল ও কিছু আরব দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলেও, যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিক থেকে তারা আংশিক স্বস্তি পেয়েছে। হামাসকে চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছিল মানবিক সংকট, চাপ এবং জনসাধারণের ক্লান্তি।
এই চুক্তি কি ভবিষ্যতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দিকে পথ খুলবে, তা এখনও অজানা। তুরস্ক এবং কাতার, মিসরসহ কিছু আরব দেশ মনে করেন, এই চুক্তিতে দুটি রাষ্ট্রের সমাধানের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।
এরদোগান অক্টোবরের শুরুতে বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং গাজার পুনর্গঠন। নিরাপত্তা এবং তুরস্কের সম্ভাব্য সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী পর্যায়ে হবে। সূত্র: রয়টার্স