মিশরের পর্যটন নগরী শার্ম এল-শেখে গাজা যুদ্ধের অবসান এবং বন্দি বিনিময় নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে। মিশরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, আলোচনায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল ‘বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির’ বিষয়ে আলোচনা করছেন।
এই আলোচনাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ, যার মূল লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও দুই পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময় কার্যক্রম শুরু করা। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনাটি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বন্ধ দরজায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, হামাসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের শীর্ষ আলোচক খালিল আল-হাইয়া, যিনি সম্প্রতি দোহায় ইসরায়েলি হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। আলোচনার আগে তিনি মিশরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
হামাসের এক ঘনিষ্ঠ ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনাগুলো কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে, কারণ ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনানের মিশরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গাজা যুদ্ধের অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এদিকে, সোমবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও গাজা আকাশে এখনও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়ার সময় ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরে অবস্থান বজায় রাখবে।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে গাজায় আটক ৪৭ জন জিম্মিকে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তবে বন্দি তালিকা নিয়ে আগের আলোচনাগুলো ব্যর্থ হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (ICRC) জানিয়েছে, তাদের দলগুলো বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা বিতরণে পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি গাজায় একটি টেকনোক্রাট অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে, যা তার নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের অধীনে কাজ করবে।
তবে হামাস জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে তাদের মতামত থাকা উচিত।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আলোচনায় ব্যর্থতা হলে সেনারা আবারও যুদ্ধ শুরু করবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১,২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।