বুধবার , ৬ আগস্ট ২০২৫ | ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অস্ট্রেলিয়া
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আফ্রিকা
  6. আবহাওয়া
  7. আমেরিকা
  8. আয়ারল্যান্ড
  9. ইউক্রেন
  10. ইউরোপ
  11. ইতালি
  12. কানাডা
  13. খেলাধুলা
  14. গ্রাম বাংলা
  15. চিত্র বিচিত্র

খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
Probashbd News
আগস্ট ৬, ২০২৫ ২:২১ অপরাহ্ণ

Spread the love

খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস-২০২৫ একটি রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের প্রায় ৪৪ শতাংশ লোক মানসম্মত খাবার পান না। জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থা মিলে গত রবিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পৃথক প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশের খাদ্যসংকটের কারণ হিসেবে ২০২৪ সালের দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অসুবিধার সম্মিলিত প্রভাবকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু খাদ্যনিরাপত্তার সংকটই নয়, স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশের বেশি বা ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পান না। ২০১৭ সালের এ অনুপাত ছিল ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৭ বছরের উন্নতমানের খাদ্য না পাওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুষম খাদ্য না পাওয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা মানসম্মত খাবার পান না। এটা উদ্বেগের বিষয়। খাদ্য আমাদের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য মানসম্মত খাবার না পেলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। খাদ্যনিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এর ওপর দেশের মানুষের জীবন অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা বলতে অনেক কিছু বোঝায়। শুধু একটি বিষয় নয়। খাদ্যনিরাপত্তা মানে একজন ব্যক্তি বা পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার এবং সে যদি স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারে, তাহলে বলা হয় খাদ্যনিরাপত্তা আছে।

খাদ্যনিরাপত্তা বলতে বাজারে খাবার থাকলেই হবে না, খাবারটা সেই পরিবার বা ব্যক্তির কেনার সামর্থ্য থাকতে হবে। শুধু কেনার ক্ষমতা থাকলেই হবে না। খাওয়ার পর শরীরে পুষ্টি আসতে হবে। কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা বলতে আমরা যেটা বুঝব, খাবারের প্রাপ্যতা থাকতে হবে। সেই খাবার কেনার আর্থিক ক্ষমতা থাকতে হবে। সবমিলিয়েই খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

এদিকে জাতিসংঘের খাদ্যসংকট সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে সরকার তার সঙ্গে একমত নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ প্রতিবেদনগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছেছে। সাড়ে ২০ লাখ টনের বেশি ধান, চাল ও গমের মজুতকে রেকর্ড বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চালের সর্বোচ্চ সংগ্রহের পথে সরকার।

খাদ্য অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে মোট খাদ্যশসের মজুত এখন ২০ লাখ ৫৪ হাজার টন। এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সরকারি সর্বোচ্চ খাদ্যশস্যের মজুত ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টন হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে এই দুই প্রতিবেদন থেকে আমাদের স্পষ্ট হতে হবে- আসলে আমরা কতটা খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছি। আমরা যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলি তা কতটা সঠিক, এটা স্পষ্ট করার সময় এসেছে। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চালের বাম্পার ফলন হলেও বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হয়। তথ্য ও উপাত্তের মধ্যে সব সময় একটা গলদ লক্ষ্য করা যায়। আমাদের এ পরিসংখ্যান সঠিক করতে হবে, তা না হলে আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলো দেখে এক ধরনের অস্পষ্টতা সৃষ্টি হবে বা শুভঙ্করের ফাঁকি মনে হবে।

দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, কর্মসংস্থান বাড়েনি। দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। ফলে তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের দরকার তা কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। সেই সঙ্গে অপুষ্টি যোগ হয়েছে। কোভিড-পরবর্তী দরিদ্র মানুষের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকার খাদ্যঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গরিব মানুষের খাদ্য কেনার সামর্থ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

সর্বশেষ - গ্রাম বাংলা

Translate »