ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে ফের কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী মস্কো। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শুক্রবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র মধ্যে টেলিফোন বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে ল্যাভরভ মস্কোর এই অবস্থান নিশ্চিত করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ওয়েনবিন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘চীন বিশ্বাস করে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যেসব মতপার্থক্য রয়েছে সেসব কূটনৈতিক আলোচনা, সংলাপ ও রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। তাছাড়া বর্তমানে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে, এটি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।’
‘বৃহস্পতিবারের টেলিফোন বৈঠকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারটি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে জানানোর পর তিনিও তা মেনে নেন এবং বলেন, মস্কো কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ফের শান্তি সংলাপ শুরু করতে আগ্রহী। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও মস্কোর এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।’
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিৃবতিতে ওয়াং ই বলেন, সাবেক সোভিয়েত আমলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তি বলে রাশিয়ার যে পরিচিতি ছিল, তা ফিরে পেতে মস্কোর প্রতি সবসয়ই ‘দৃঢ় সমর্থন’ থাকবে বেইজিংয়ের।
‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বে রুশ জনগণের একত্রিত হওয়া, যাবতীয় সংকট ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশে রাশিয়ার প্রতি বরাবরই চীনের দৃঢ় সমর্থন থাকবে,’ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ওয়াং ই।
২০১৪ সালে রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়া হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবির শুরু করে ইউক্রেন। এই নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে প্রতিবেশী এই দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন পুতিন।
যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পর বেলারুশে শান্তি সংলাপ শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে। পরে এই সংলাপ স্থানান্তরিত হয় তুরস্কে; কিন্তু গত জুন মাসে সেই সংলাপ থেমে যায়। এখন পর্যন্ত সেটি স্থবির অবস্থাতেই রয়েছে।
রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ট মিত্র চীন গোড়া থেকেই এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছে। বেইজিংয়ের দাবি, মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উস্কানির কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এবং যুদ্ধ শুরুর পর গত ৯ মাসে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য কোথাও, কোনো ফোরামে এক বারও রাশিয়ার নিন্দা করেনি চীন। এমনকি জাতিসংঘে ইউক্রেন ইস্যুতে এ পর্যন্ত যত গণভোট হয়েছে—সেসবের প্রত্যেকটিতেই হয় মস্কোর পক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, নয়তো ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।