সরকার নিরপেক্ষ না হলে যত ভালো লোককেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হোক- নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বর্তমান দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা না করে, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি আগে পদত্যাগ করো, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও; তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারা (সরকার) তা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না৷
তিনি বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কথাটা আওয়ামী লীগ স্বীকার করতে চায় না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলাম- তারা সবাই তার ঘোষণা শুনেছিলাম। তিনি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ঘোষণা দিলেন, তারপরই সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
‘বিএনপি পালায়, আওয়ামী লীগ পালায় না’- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ তো ১৯৭১ সালেই পালিয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে পালিয়েছে, বাকিরা ভারতে পালিয়েছে। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে থেকে যুদ্ধ করেছেন। আমরা কখনো পালিয়ে যাওয়ার দল না, তার (জিয়াউর রহমানের) প্রতিষ্ঠিত দল পালিয়ে যাওয়ার দল নয়। এখানে থেকেই লড়াই করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান অল্পদিন বেঁচেছিলেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে চার থেকে পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি পুরো দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এদেশকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নাম পাল্টে দিতে হবে, এটাকে বলতে হবে ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি।’ এগুলো আমার কথা না, এগুলো ইতিহাস।
‘বিএনপি গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছে’ – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ মন্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোন গণতন্ত্র? তাদের গণতন্ত্র হচ্ছে আমরা সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবো আর তোমরা সারাজীবন ধরে প্রজা হয়ে থাকবে। এটাই হচ্ছে তাদের গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে সব জায়গা সংকুচিত করে ফেলেছে। আগে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে আমরা সভা সমাবেশ করতাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটাকে স্টেডিয়াম করে দিলো। এরপর মুক্তাঙ্গনও বন্ধ করে দিলো। তার আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সভা সমাবেশ করা হত। সেখানেও ডিভাইডার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। প্রেস ক্লাবের সামনে ছোট একটা জায়গা, সেখানেও বন্ধ করে দেওয়া হলো। এইভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না।
সমবায় দলের সভাপতি মীর আফরোজ খানম যুথির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়াপর্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হোক, কৃষক দলের নেতা কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।