বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী উপাদানের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু এর মধ্যে প্রবাসীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। এই রেমিটেন্স শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উপাদান নয়, এটি সমাজ এবং পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতেও সহায়ক।
প্রবাসীদের গুরুত্ব : প্রবাসীরা দেশের বাইরের কর্মসংস্থানে নিজেদের জড়িয়ে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন। তারা প্রায়শই কঠিন পরিবেশে কাজ করেন, যা তাদের শ্রম ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত। তাদের পাঠানো অর্থ:
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে দেশের মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন: প্রবাসীরা তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি: প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ স্থানীয় ব্যবসা, জমি ক্রয়, ও অন্যান্য বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়।
রেমিটেন্সের ভূমিকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রবাসীরা বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি দেশের মোট জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক ঋণ কমাতে সহায়ক। এটি আমদানি ব্যয় মেটাতে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রতিরোধে কার্যকর।প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দিয়ে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। গ্রামীণ পরিবারগুলোতে রেমিটেন্স সরাসরি দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করে। রেমিটেন্সের কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনে।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, অনেক প্রবাসী এখনো হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠান, যা অর্থনৈতিক সঠিক পরিসংখ্যানকে ব্যাহত করে। বাসীদের পাঠানো অর্থের একটি বড় অংশ সঠিকভাবে বিনিয়োগ না হয়ে অপচয় হয় এক্ষেত্রে করণীয় হলো ব্যাংকিং চ্যানেল সহজতর করা: অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করতে হবে। বিদেশে কাজের সময় তাদের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রবাসীদের অর্থ বিনিয়োগের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া।
বাংলাদেশের প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়নে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। তাই প্রবাসীদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও সেবা নিশ্চিত করা জাতীয় দায়িত্ব।