জার্মানির কাছ থেকে পাওয়া সুবিধা আশ্রয়প্রার্থীরা যেন দেশটির বাইরে পাঠাতে না পারেন সেজন্য তাদের ডিজিটাল ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। দেশটিতে ডিজিটাল ডেবিট কার্ড চালু সংক্রান্ত নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। সংসদে পাস হলে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
আশ্রয়প্রার্থীরা বর্তমানে ক্যাশ কিংবা ভাউচারের মাধ্যমে সুবিধা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে একজন আশ্রয়প্রার্থী প্রতিমাসে ক্যাশ বা ভাউচার হিসেবে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো পেয়ে থাকেন। ভবিষ্যতে এই অর্থ ডেবিট কার্ডে ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীরা সেই কার্ড দিয়ে সাধারণ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়, এমন দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে পারবেন। তবে এই কার্ড দিয়ে অনলাইন পেমেন্ট করা যাবে না।
জার্মানির ১৬টি রাজ্য এই ধরনের কার্ড ব্যবস্থা চালু করতে সম্মত হয়েছে। তবে কোনো রাজ্য কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের মতো করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। যেমন বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ ‘নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে’ এই কার্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে চাইছে। কী ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তা উল্লেখ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে এর মধ্যে জুয়া কোম্পানি থাকতে পারে।
• কেন এমন কার্ড?
১৬ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এই কার্ড চালুর আনুষ্ঠানিক যে কারণ বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে, ‘‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা নিজ দেশে পাঠানোর সম্ভাবনা বন্ধ করা এবং এভাবে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট অমানবিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’’
আশ্রয়প্রার্থীরা যেন অর্থসহায়তা নিজ দেশে পাঠাতে না পারেন সেটি নজরে রাখতে বর্তমানে রাজ্য কর্তৃপক্ষকে অনেক চাপ নিতে হচ্ছে। সেটি কমানোও এমন কার্ড চালুর একটি উদ্দেশ্য বলে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু জায়গায় কয়েক মাস আশ্রয়প্রার্থীদের এমন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। এতে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক চাপ কমেছে। প্রতিমাসের শুরুতে একসঙ্গে এত অর্থ পাওয়া নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ কমেছে। এছাড়া অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী পরিবার জানিয়েছে, তাদের মাসিক বাজেট ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়েছে।
তবে রাজনীতিবিদেরা আশা করছেন, এই কার্ড চালু হলে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নিরুৎসাহিত হবে। ফলে ভোটারদের ডানপন্থিদের দিকে ঝোঁকা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থীরা যে অর্থসহায়তা তাদের দেশে পাঠায় তার পক্ষে খুব কম প্রমাণ আছে। স্যোসাইটি ফর ফ্রিডম রাইটসের আইনি বিশেষজ্ঞ লেনা ফ্রেরিশ বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, আশ্রয়প্রার্থীরা তখনই দেশে টাকা পাঠান যখন তারা নিজেরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে এমন কার্ড চালুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। একজন আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে থাকার মেয়াদ অন্তত তিনমাস না হলে আইনত কাজ করতে পারেন না।